1/10/2024

ব-দ্বীপ অঞ্চলের ছয়টি পরিকল্পনা

 

Just click and wonder 


ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র


টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এর আগে আওয়ামী লীগ দিন বদলের সনদ নামে ইশতেহার দিয়েছিল। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশরূপে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। এ ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানটি তখন বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল। এবারের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেছে। এ ইশতেহার নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। অনেকের মতে এখানে নতুন কিছু নেই। কিন্তু একটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করার মতো, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়নের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে প্রকল্পের ধারাবাহিকতা না থাকা। এক সরকারের আমলে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়, অন্য সরকারের আমলে দেখা গেছে সেই প্রকল্প সম্পূর্ণই বাতিল করা হয় বা সেভাবেই আটকে থাকে। এভাবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। আওয়ামী লীগের বর্তমান ইশতেহারটিতে ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের যে কথা বলা হয়েছে, তাতে আগেকার ধারাবাহিকতা ছিন্ন হয়নি বলেই উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকবে তা আশা করা যায়। নতুন প্রকল্পের চাকচিক্যে উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত হবে না।


Adult games?  



আমরা যে দীর্ঘস্থায়ী বা টেকসই উন্নয়নের কথা বলি তাতে ধারাবাহিক উন্নয়নের গতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমস্যাগুলোর কথা আমরা মাথায় রেখেই এ কথা বলছি। আওয়ামী লীগ ইশতেহারে যে ১১টি বিষয় উল্লেখ করেছে তা হলোÑ ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে দ্রব্যসামগ্রী রাখার চেষ্টা করা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিনিয়োগ বাড়ানো, শিল্প প্রসারে বিনিয়োগ বাড়ানো, আর্থিক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার ঘটানো। ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলোÑ স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ। ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১, ২০৪১ সময়রেখার মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

Adult games?  


ইশতেহারে বাংলাদেশের প্রাণপ্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানিয়েছে দলটি। তাদের মতে, গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১মতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম। সে হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুবই দরকারি। এ উদ্দেশ্যে শুধু পরিবেশ নয়, কৃষি-সমুদ্রসহ সব ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোনোর কথাও বলা হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য সম্পদ নিয়ে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কৃষির জন্য সরকার বিনিয়োগ সহায়তা ও ভর্তুকি দেবে। এ বিনিয়োগ সহায়তা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি উপকরণ-কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করার লক্ষ্যে। কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য যেসব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়েছে তা হলোÑ বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি প্রভৃতি। এ ছাড়া কৃষি আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কৃষি গবেষণায় বিশেষ গুরুত্বের কথা বলেছে দলটি। গবাদি পশুর উৎপাদনশীলতা ২০২৮ সালে দেড় গুণ বৃদ্ধি করার কথা বলেছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক দুগ্ধ, পোল্ট্রি, মৎস্য খামার প্রতিষ্ঠা, আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণে প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তার কথা বলা হয়েছে যা কৃষি ও মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সমুদ্র থেকে তেল, গ্যাস, খনিজ, মৎস্য ও জলজ সম্পদ আহরণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।

Adult games?  


সবচেয়ে বড় বিষয় ইশতেহারে দলটি অঙ্গীকার করেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় গৃহীত পরিকল্পনা অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় যেসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে তা হলোÑ উৎপাদনশীল/সামাজিক বনায়ন ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়ন, শিল্পবর্জ্য শূন্য নির্গমন/নিক্ষেপণ প্রবর্ধন, আইনসঙ্গতভাবে বিভিন্ন নগরে জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা এবং সমুদ্রোপকূলে ৫০০ মিটার বিস্তৃত স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা। এসব বিষয়ই বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ-বন্য প্রাণী গবেষকরা বলে আসছেন। ইশতেহারে এসব বিষয়ের উপস্থিতি দলটির প্রাণপ্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে বিশেষ অবস্থানকে জানান দেয় যা পরিবেশ-বন্য প্রাণী গবেষকদের জন্য অত্যন্ত আশার আলো জুগিয়েছে। প্রাণপ্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ইশতেহারে এসেছে তা হলো ব-দ্বীপ পরিকল্পনা। জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০-এর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছেÑ ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জন।


Just click and wonder 


ব-দ্বীপ পরিকল্পনার কাঙ্ক্ষিত ছয়টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয় থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানি ব্যবহারে দক্ষতা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ, সমন্বিত ও টেকসই নদী অঞ্চল এবং মোহনা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু ও বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সেগুলোর যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর প্রতিষ্ঠান ও সুশাসন গড়ে তোলা এবং ভূমি ও পানি সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত পরিষ্কার করে দেখিয়েছে পরিবেশ নিয়ে তারা কতটা নিবিড়ভাবে ভেবেছে ও যথাযথ উদ্যোগের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উন্নয়ন কখনোই একমুখী কোনো বিষয় নয়। শুধু নগরায়ণ,শিল্পায়ন একটি দেশকে সুখী-সমৃদ্ধ করে না। এজন্য দরকার হয় পরিবেশ-প্রতিবেশ ঠিক রাখা। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশের কথাও ভাবতে হবে। ইশতেহারে তা বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। বনায়ন, নদীরক্ষা, জলাভূমি সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বায়ুদূষণ রোধ, শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থপনার কথাও এসেছে। অনেকে ইশতেহারে নতুন কিছু নেই বললেও আমরা দেখছি, প্রাণপ্রকৃতি-পরিবেশ নিয়ে দলের সঠিক অবস্থান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।


শিক্ষক ও জীববৈচিত্র্য গবেষক


Just click and wonder 





No comments:

Post a Comment