1/10/2024

জলাভূমি ধ্বংসের পরিণাম

 বাংলাদেশে শুধু নদী নয়, অসংখ্য খালবিল, নালা, পুকুর-ডোবা রয়েছে। কিন্তু এই বিস্তীর্ণ জলাভূমি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কমছে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট, স্থায়ী বা অস্থায়ী, স্থির বা প্রবহমান পানিরাশিবিশিষ্ট স্বাদু, লবণাক্ত বা মিশ্র পানি এলাকা বোঝায়। বন্যপ্রাণী বলতে বোঝায় বিভিন্ন প্রকার ও জাতের প্রাণী, যার আবাসস্থল জীবনচক্রের কোনো এক পর্যায়ে বনে। 

Revolut- your first money transfer

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের জলাভূমি গত ৫০ বছরে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। ১৯৭১ সালে জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ হেক্টর। তা কমে এখন হয়েছে ২৮ লাখ হেক্টর। অর্থাৎ ৬৫ লাখ হেক্টর জলাভূমি কমেছে। বিশ্বের দিকে তাকালেও এমন চিত্র চোখে পড়বে। বিশ্বের মোট জলাভূমির প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে। বাকি জলাশয়গুলোও হুমকির মুখে। এসব জলাভূমি মোট প্রাণী প্রজাতির ৪০ শতাংশের আশ্রয়স্থল। প্রতিনিয়ত এসব জায়গা থেকে নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বড় সংখ্যক প্রাণী প্রজাতি জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় ৬৪ প্রজাতির উভচর তো বটেই, ৮৩ প্রজাতির সৈকত পাখি, ৩০ প্রজাতির বুনোহাঁস, আট প্রজাতির শামুকখোল, ১৮ প্রজাতির বগলাসহ অসংখ্য প্রজাতি এর ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ ছাড়া প্রতি বছর শীতের সময় বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে, যাদের আবাসস্থল ও খাবার দুটোই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে। 
জলাশয় হারিয়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ, জলাশয়ে পয়ঃপ্রণালি স্থাপন, বিভিন্ন তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গমন, বালু-পাথর আহরণ ইত্যাদি। এ ছাড়া ঝিনুক, কোরাল, মাছ, কচ্ছপ প্রভৃতি ধরা-মারাও জলাশয়ের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। 

Ali express imagine and buy

২০১২ সালের বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী তপশিল-১ মতে ২৫ প্রজাতি এবং তপশিল-২ মতে ৫২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। এই ৫২ প্রজাতির মাছ ধরা, মারা, বিক্রয়, বিপণন করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসব মাছ বন্যপ্রাণী হিসেবে গণ্য হবে। মাছগুলো হলো– পাখনামাথা হাতুড়ি হাঙর, দক্ষিণি হাতুড়ি হাঙর, মসৃণ হাতুড়ি হাঙর, হাঙর, বাদামিদাগি বাঁশ হাঙর, মুইচিয়া হাঙর, কানি হাঙর, তিমি হাঙর, থুটটি হাঙর, কালা হাঙর, রেশমি হাঙর, চওড়ামুখি হাঙর, থুটা হাঙর, দাগিলেজ হাঙর, বাঘা হাঙর, গাঙ্গেয় হাঙর, ফৌরি হাঙর, চোখানাসা পীতম্বরী, দানব পীতম্বরী, সবুজ করাতি হাঙর, লম্বাদন্তী করাতি হাঙর, ছুরিদন্তী করাতি হাঙর, দেশি বড় বাইন ও পাতি সমুদ্র ঘোড়া, তিলাশোল, পাখনা মহাশোল, সোনালি মহাশোল, ভাঙন মাছ, নানদিনা, ঘোড়ামুইখা, দানব বাঘাইড়, চেনুয়া, কোঠা কুমিরের খিল, তেলোটাকি, তারা বাইন, নাপিত কৈ, নাফতানি, কুঁচিয়া, রিঠা, দেশি বোল, জয়া হিরালু, বাংলা রানী, তিলা বিশতারা, গাঙ মাগুর ধাইন, লম্বালেজি পদ্মমামনি, বেনেটের হাউশপাতা, নীলচিত্রা হাউশপাতা, চিত্রা শঙ্খচিল, দাগি শঙ্খচিল, কাঁটালেজি দেওমাছ। 

Sliminmax-pl Be slim. 

এসব মাছ সচরাচর দেখা যায় না। এখনই সচেতন না হলে অচিরেই আমরা এসব প্রজাতির মাছ হারিয়ে ফেলব। সরকার এসব মাছ ধরা-মারা-বিক্রয় নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। আমাদের এখন কড়া নজর দিতে হবে জলাশয় যাতে  ভরাট করা না হয়। জলাভূমি নিয়ে সরকারের আইন থাকলেও বাস্তবায়ন নেই। জলাশয়ের ওপর শুধু মাছ নয়, বিভিন্ন শামুক-কচ্ছপসহ অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি নির্ভরশীল। জলাভূমি রক্ষা করতে না পারলে শুধু প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হবে না; ধ্বংস হয়ে যাবে সংশ্লিষ্ট বাস্তুতন্ত্র। 


ড. বিভূতিভূষণ মিত্র: শিক্ষক ও গবেষক 

No comments:

Post a Comment