3/26/2024

বন সংরক্ষণে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 




বন সংরক্ষণে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি 


বিভূতিভূষণ মিত্র  

 প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৪ | ০২:৩৮ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ | ০২:৩৯

বন ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনকে এ বছরের বন দিবসের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও নানা উদ্ভাবন এখন বন পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখছে। পৃথিবীর ফুসফুস নামে পরিচিত এই বন ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করছে। আবার এও সত্য, প্রায় ৭০ মিলিয়ন হেক্টর বন প্রতিবছর আগুনে পুড়ে যায়। প্রযুক্তিকে এমন পর্যায়ে উন্নীত করা দরকার, যেন তা বনে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের সতর্ক করতে পারে।



বাংলাদেশে পাহাড়ি বন, ম্যানগ্রোভ বন, উপকূলীয় বন, শালবন, কৃত্রিম বন প্রভৃতি দেখা যায়। পাহাড়ি বন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় অবস্থিত। বৃহত্তর খুলনা জেলায় অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন। বৃহত্তর পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ভোলা জেলায় উপকূলীয় বন অবস্থিত। এ ছাড়া বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় শালবন রয়েছে। পাহাড়ি বনের পরিমাণ ১৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি। এসব বনে তেলশুর, চিকরাশি, বৈলাম, গামার, বাঁশ, শিল কড়ই প্রভৃতি গাছ জন্মে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে দেখা যায় বানর, শূকর, বনমোরগ, সাপ, শিয়াল, নেকড়ে, কাঠবিড়ালী প্রভৃতি। লতার মধ্যে রয়েছে কাঞ্চনলতা, আনিগোটা, কুমারীলতা, শতমূলী, গিলা প্রভৃতি। 

বনের ওপর মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই নানাভাবে নির্ভরশীল। ঘর বানানো, জ্বালানি প্রভৃতি কাজে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই বন ব্যবহার করে আসছে। জাতিসংঘের মতে, সারাবিশ্বে ১ দশমিক ৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে বনের ওপর নির্ভরশীল। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিশ্বের ৮০ শতাংশ বন মানুষের কারণে ধ্বংস হয়েছে। এফএওর তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জ্বালানি কাঠের বার্ষিক অর্থমূল্য ৪ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি।

বন অক্সিজেন তৈরি করে; আমাদের ঠান্ডা রাখে। কার্বন ডাই-অক্সাইড সংরক্ষণ করে। বাতাস পরিষ্কার ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। 



জীবজগতের ৮০ শতাংশের বসবাস বনে। প্রায় ৬০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের আবাসস্থল এই বন। এ ছাড়া উভচর প্রজাতির ৮০ শতাংশ, পাখি প্রজাতির ৭৫ শতাংশ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতির ৬৮ শতাংশের বসবাস বনে। কিন্তু ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশনের (আইইউএনসি) ২০১৫ সালের প্রতিবেদনমতে, বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ৩১। ১৬০০ প্রাণী প্রজাতির মধ্যে ৩৯০টি হুমকির মধ্যে রয়েছে। আর ৫০টির বেশি প্রজাতি রয়েছে ঝুঁকিতে। 

উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নানাভাবে এসব বন রক্ষায় কাজ করতে পারে। প্রথমত, নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন যেমন ড্রোন দ্বারা অবৈধ গাছ কাটা পর্যবেক্ষণ ও বন্ধ করা যায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে লোকায়ত ও স্থানীয় জ্ঞানকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আদিবাসী মানুষ উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন ও বনের ভূমি রক্ষা করতে পারে। ক্যামেরা, বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এসব অনলাইনে যুক্ত করে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বন ও বনে বিপজ্জনক পরিস্থিতি আছে কিনা, তা জানা যাবে। এর মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর ঘনত্ব শুধু নয়; গণনাও সম্ভব।



ক্যামেরায় রিমোট ডিভাইস যুক্ত করে সেন্সরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ছবি ও ভিডিও ধারণের মাধ্যমে বন্যপ্রাণীর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার, এনজিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবাইকে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার বনকে রক্ষা করতে পারবে। 

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র: শিক্ষক ও গবেষক

https://samakal.com/opinion/article/228733/%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%89%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%80-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%C2%A0?fbclid=IwAR3L5gORdQIqJn9MQrzOrrlYrI7IQRSvlPqiL1dbJk3FrzlOcJeDIvD2OFM

No comments:

Post a Comment