7/31/2024

জলবায়ু পরিবর্তন : ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের

 




জলবায়ু পরিবর্তন

ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ১ ঘণ্টা আগে

আপডেট : ১ ঘণ্টা আগে

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর এপ্রিল মাসে গড়ে দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটছে। ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ এত বেড়েছে যে, কয়েকবার হিট অ্যালার্ট জারি করতে হয়েছে। বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, শিল্পায়ন, নগরায়ণ ছাড়াও বৈশ্বিকভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ার কারণে তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল আইপিসিসির মতে, বাংলাদেশের তাপমাত্রা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ০.৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ০.৬৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। ২০৫০ সালে এটি ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাদের মতে, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অতিবৃষ্টি বাড়বে ৭ শতাংশ। প্রতি দশকে একবার প্রচণ্ড খরা হবে। এতে অধিকাংশ জমি শুকিয়ে যাবে। এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে তাপপ্রবাহ বাড়বে ৯.৪ গুণ। এরই মধ্যে তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েছে ২.৮ গুণ।

 গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

এসব কারণে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে ৮.৪ মিলিমিটার। বাংলাদেশে বর্ষার আগে আগে বৃষ্টিপাত কমেছে আর বর্ষার পর পর বৃষ্টিপাত বেড়েছে। বর্ষার আগে আগে বলতে মার্চ থেকে মে এবং বর্ষার পর পর বলতে জুন থেকে নভেম্বর। এটি আবহাওয়ার ধরন পাল্টে দিচ্ছে। এর ফলে শীতকালে শুষ্কতা আরও বেড়ে যাচ্ছে এবং বর্ষাকালে আর্দ্রতা আরও বেশি বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) বলেছে, বাংলাদেশ শীতকালে আরও বেশি শুষ্ক এবং বর্ষাকাল আরও বেশি আর্দ্র হচ্ছে। তাদের মতে, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সালে প্রতি বছর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ০.০০৬৭ ডিগ্রি।

১৯৯১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বেড়েছে গড়ে ০.৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেড়েছে ১.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বেড়েছে ০.৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গড়ে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ গুণ। বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা গত ৩ দশকের চেয়ে বেশি বেড়েছে। প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ৭ ভাগ বাড়ে অতিবৃষ্টির হার। সাইক্লোনও বাড়ে। এতে দশকে একবার খরায় পড়বে। প্রতি দশকে জমি উর্বরতা হারাবে ৪ বার। সম্প্রতি ঢাকাসহ ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এটি নিছক তাপপ্রবাহ নয়। তীব্র তাপপ্রবাহ। হিট অ্যালার্ট জারি করতে হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করতে হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর ওপরও প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় এ ধরনের নীতিমালা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। ডাক্তারদের এই নীতিমালা সামনে রেখে প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। এটি আরও ফলপ্রসূ হবে যদি এই নীতিমালাটি গণমাধ্যমে ভালোভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়


ক্লিন এয়ার ফান্ডের একটি তথ্যমতে, স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ফান্ডিং ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নের তহবিলপ্রাপ্তিতে তৃতীয় ছিল বাংলাদেশ। এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বায়ুর মান উন্নয়নে বাংলাদেশ ২.৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। আরও একটি তথ্য অনুযায়ী শীতকালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি এবং অস্বাস্থ্যকর হলেও বর্ষাকালে দূষণ একটু কম থাকে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি কারণ হলোÑ ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজে সৃষ্ট ধোঁয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়। এসব বায়ুদূষণের কারণে মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসার ও অন্যান্য রোগ, শ্বাসযন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ হতে পারে। ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর দেশের সবচেয়ে দূষিত জেলা। এখানকার মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৮.৩ বছর। 

সম্প্রতি আমাদের বন ও পরিবেশমন্ত্রী এক আলোচনায় জানান, বাংলাদেশ ০.৫ শতাংশের কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি হলেও এটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ১৭ শতাংশ উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধির ফলে ৪০ মিলিয়ন মানুষ ঘরহারা হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির মতে, ২১০০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে না পারলে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে পড়বে। ঢাকা কার্বন নিঃসরণ ২০৫০ সাল নাগাদ ৭০ ভাগ কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য বৈদ্যুতিক যানবাহন বাড়ানো, সবুজায়ন প্রকল্প, প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন প্রভৃতির ব্যবস্থা করবে। 

২০২০ সালে তাপপ্রবাহে সৃষ্ট ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে দেশের ২৬ লাখ শিশু। এটি দেশের মোট শিশুর ৫ ভাগ। সাম্প্রতিক এক তথ্য মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের মোট শিশুর ৯৯ ভাগ তাপপ্রবাহে সৃষ্ট ঝুঁকির মুখে পড়বে। অর্থাৎ ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু প্রচণ্ড তাপদাহের মুখোমুখি হবে। ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি বাড়ে ৫ ভাগ। এটি ১৬ ভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাপমাত্রা যত বাড়বে, অপরিণত শিশুর জন্মহার তত বাড়বে। এমনিতেই বাংলাদেশে অপরিণত শিশু জন্মের হার বেশি। তাপপ্রবাহ এভাবে তীব্র আকার ধারণ করলে এটি আরও বাড়তে থাকবে। দিন দিন তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় তাপপ্রবাহে বেড়ে গেলে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়, লক্ষণ কী কী ও এর প্রতিকার কীÑ এসব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। তাপপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়: তার প্রতিকার এবং কোনো অবস্থায় দ্রুত ক্লিনিকে নেওয়া প্রয়োজন, এ নিয়ে সচেতনতা এখন খুবই জরুরি। এজন্য দরকার রেডিও, টিভি, পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত প্রচারণা। গরমজনিত লক্ষণ দেখা দিলে আমাদের কী করা উচিত, কী কী খাবার গ্রহণ করা উচিত; এসব নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের সহায়তায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি জাতীয় নীতিমালা তৈরি করে প্রকাশ করেছে। 

এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বেশি শিশুদের। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও এর ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর ওপরও প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এই অবস্থায় এ ধরনের নীতিমালা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। ডাক্তারদের এই নীতিমালা সামনে রেখে প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। এটি আরও ফলপ্রসূ হবে যদি এই নীতিমালাটি গণমাধ্যমে ভালোভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়। জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জনগণকে নিয়ে এগিয়ে এলে তাপপ্রবাহও আমরা সহজেই মোকাবিলা করতে পারব।

জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি ড. বিভূতিভূষণ মিত্র


https://protidinerbangladesh.com/opinion/107395/%E0%A6%9D%E0%A7%81%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0

হাতি হত্যা কি বন্ধ করা যাবে না

 হাতি হত্যা কি বন্ধ করা যাবে না

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র




শে যে হাতিটি দেখা যায়, এটিকে এশিয়ান এলিফ্যান্ট বা এশীয় হাতি বলে। এই এশীয় হাতি ১৩টি দেশে দেখা যায়। বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৪ সাল থেকে পরবর্তী ১৭ বছরে বাংলাদেশে হাতি হত্যা করা হয়েছে ১১৮টি। আরেকটি তথ্য অনুযায়ী হাতি-মানব দ্বন্দ্বে ২৩৬ জন মানুষ মারা গেছে।


আইইউসিএন-এর তথ্য অনুয়ায়ী বাংলাদেশে তিন ধরনের হাতি দেখা যায়। কিছু হাতি তাদের আবাসস্থলে বাস করে। কিছু হাতি পরিব্রাজন করে। কিছু হাতি পোষ মানা।

বন্য হাতি যারা, তারা তাদের আবাসস্থলে বাস করে, তাদের সংখ্যা ২৬৮। পরিব্রাজনকারী হাতির সংখ্যা ৯৩। পোষ মানা হাতির সংখ্যা ৯৬। বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত পাঁচ শর মতো হাতি ছিল।


সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এই হাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৮ থেকে ৩২৭-এ। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২৬৩টি, যার ৫৫ ভাগই কক্সবাজার এলাকার। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও মানব-হাতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গায়। 

প্রতিবছর শ্রীলঙ্কায় ২০০ হাতি হত্যা হয়। ভারতে মানুষ-হাতি সংঘর্ষে মারা পড়ে বছরে ১০০ হাতি।

কেনিয়ায়ও এই সংখ্যা বছরে ১২০-এর বেশি। ডাব্লিউডাব্লিউএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী মানুষ-বন্য প্রাণী দ্বন্দ্ব পৃথিবীর অনেক প্রজাতির প্রাণীর টিকে থাকার জন্য এখন হুমকিস্বরূপ। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এসবের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে বন্য বিড়াল প্রজাতির ওপর। এদের ওপর প্রভাব ৭৫ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাংসাশী প্রাণী এবং হাতির ওপরও এসবের ক্ষতিকারক প্রভাব বেশ দেখা যাচ্ছে।


বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২টি হাতি চলাচলের জায়গা রয়েছে। কিন্তু এই রাস্তাগুলো হাতি চলাচলের উপযুক্ত নয়। হাতি বেঁচে থাকার জন্য এই পরিব্রাজনের রাস্তাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিন দিন এসব জায়গা সংকুচিত হচ্ছে।

অনেক দেশেই হাতির বিচরণক্ষেত্রে মানুষ বসবাস করে। তাদের বন্য প্রাণীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় জমি, খাদ্য, পানি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে। এসব মানুষ হাতির বিচরণ এলাকা কতটুকু বা অন্যান্য বন্য প্রাণী কোথায় বিচরণ করে এসব নিয়ে অসচেতন। ক্রমেই হাতি বসবাসের এলাকায় নতুন গ্রাম, খামার, শহর, বড় রাস্তা, শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। হাতির যাতায়াতের পথে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। বনভূমি কৃষিভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। হাতিরা নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে এ কারণে। পানি ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ বড় বড় বিপদের মুখে পড়ছে। হাতি তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী। এটি দিনে ১৫০ কিলোগ্রাম ঘাস এবং ১৯০ লিটার পানি পান করে। এ জন্য তাকে খাদ্য ও পানীয়ের জন্য বড় একটা এলাকা ঘুরে বেড়াতে হয়। একটি বড় পুরুষ হাতি ওজনে ছয় হাজার ৮০০ কিলোগ্রাম হয়, যা অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকে ১০০ গুণ বেশি ভারী। যখন হাতি নিজে হুমকির মুখে পড়েছে মনে করে তখন সে মানুষকে আঘাত বা হত্যা করে, ঘরবাড়ি ও সম্পদ বিনষ্ট করে। হাতির কবলে পড়ে অনেক কিছুরই ক্ষতি হয়ে থাকে। ভারতেই প্রতিবছর হাতির কারণে পাঁচ লাখ পরিবারের শস্যের ক্ষতি হয়। ফলে এসব পরিবার প্রচণ্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাবে পড়ে।


২০২১ সালে দেওয়া আইইউসিএন-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে আগের ১৭ বছরে ৯০টি হাতি হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে হত্যা করা হয় ১১টি হাতি। কোনোভাবেই এই হত্যা কমানো যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী হাতি হত্যাকারীর শাস্তি দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড। তবে আত্মরক্ষার্থে হত্যার ক্ষেত্রে এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু এসব বিধান প্রতিপালনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সম্প্রতি এক সেমিনারে বাংলাদেশে নভেম্বর মাসেই চট্টগ্রাম ও শেরপুরে আটটি হাতি হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। এগুলো হয় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে, না হয় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হতে বাধ্য। তাই এই মুহূর্তে হাতি হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক 

https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2024/07/31/1410417