9/28/2024

প্লাস্টিকের পৃথিবী ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 


প্লাস্টিকের পৃথিবী

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০৯:০৮

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে স্লোগান ছিল—‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিকদূষণ’। আমরা পণ করেছি, পণ করার পর কি পণের কথাটি মনে রেখেছি? প্লাস্টিক আবিষ্কৃত হয় ১৯০৭ সালে। বিজ্ঞানী বেকল্যান্ড এটি আবিষ্কার করেন। এটি পেট্রোলিয়াম দিয়ে তৈরি একটি যৌগ। বেকল্যান্ড এটি আবিষ্কার করার সময় কি ভেবেছিলেন, এর ব্যবহার এতটাই হবে যে একদিন পুরো পৃথিবীটাই প্লাস্টিকে ঢেকে যাবে। 

বিশ্বে প্রতিবছর প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় প্রায় ৪৫ কোটি টন। প্লাস্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে। প্লাস্টিকদূষণকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। প্লাস্টিক এখন সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বে প্রতি মিনিটে প্লাস্টিকের বোতল বিক্রি হয় প্রায় ৫ লাখ। বিশ্বে বছরে ৮০ লাখ টন বর্জ্য সাগরে মিশে যায়। একটি গবেষণার তথ্যমতে, দোকানে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ২০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর বোতল হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ৪৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। 

বাংলাদেশে প্লাস্টিক দ্রব্যাদির বাজার ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ঢাকায় প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ পলিব্যাগের বর্জ্য ফেলা হয়।

প্লাস্টিকের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছেই। বাংলাদেশে ২০০৫ সালের বার্ষিক মাথাপিছু ব্যবহার ছিল ৩ কেজি। এটি বেড়ে ২০২০ সালে হয়েছে ৯ কেজি। অর্থাৎ ১৫ বছরে বার্ষিক মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে ৩ গুণ। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ঢাকায় প্রতিদিন ৬৪৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। ঢাকার মোট প্লাস্টিক বর্জ্যের ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের ৬০ শতাংশ মেশে রাস্তাঘাট আর নদীতে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আমাদের দেশে প্রতিবছর ৮ লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য হয়। এর মাত্র ৪০ শতাংশ পুনর্ব্যবহার হয়। অর্থাৎ ২ লাখ ২৮ হাজার টন পুনরায় ব্যবহৃত হয় আর বাকি অংশ পরিবেশেই থেকে যায়। 

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, পৃথিবীর ৮৫ শতাংশ কলের জলে মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। যেখান থেকে প্রতি মাসে ২১ গ্রাম এবং বছরে ২৫০ গ্রাম এই প্লাস্টিক মানুষের শরীরে ঢুকে গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণা রূপে মানুষের শরীরে ঢুকে হরমোনজনিত নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণু উৎপাদন ব্যাহত করছে। ক্যানসারসহ ত্বকের নানা রকম রোগ সৃষ্টি করছে। 

ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পরি ফ্লোরোঅ্যালকাইল, বিসফেনল এ প্রভৃতি রাসায়নিক উপাদান প্লাস্টিকে থাকে, যা স্থূলতা, গর্ভধারণের ক্ষমতা হ্রাস, বিভিন্ন স্নায়ুরোগ ঘটাতে পারে। প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্যের জন্যই হুমকি নয় শুধু, এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে জানলেও আমরা কিন্তু ঘুম থেকে উঠে আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্লাস্টিকই ব্যবহার করে থাকি। 

যদিও বাংলাদেশই বিশ্বে প্রথম প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে ২০০২ সালে। ২০১০ সালে প্লাস্টিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ন্যাশনাল থ্রি আর নীতি চালু করে। ন্যাশনাল থ্রি আর অর্থ হলো রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার জুট প্যাকেজিং আইন পাস করে। 

তা সত্ত্বেও আমরা ক্রমাগত একটি প্লাস্টিকের পৃথিবীর দিকে এগোচ্ছি। এর পরিণাম জানার পরও সচেতন হচ্ছি না। এ জন্য প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে পলিথিন ব্যাগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে সোনালি ব্যাগ বাজারজাতকরণে কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক

সুন্দরবন অরক্ষিত বন্য প্রাণী


সুন্দরবন


অরক্ষিত বন্য প্রাণী


ড. বিভূতিভূষণ মিত্র


প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪ ১০:১৪ এএম




ড. বিভূতিভূষণ মিত্র


সুন্দরবনের পরিবেশ আগের মতোই থাকবে তো? বেঁচে থাকবে তো বাংলাদেশের গৌরবদীপ্ত-উজ্জ্বল-ক্ষিপ্র-তেজি-রাজসিক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য বলছেন, আগামী ৫০ বছরে হয়তো বা এ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। কেননা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার ওপর নির্ভর করে বাঘের প্রজনন। সে প্রজননের পরিবেশ টিকিয়ে রাখাই এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা একদিকে সুন্দরবনের নিকটবর্তী শিল্পকারখানা গঠন করা হচ্ছে, অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে; অন্যদিকে খালে বিষ প্রয়োগ করে ধরা হচ্ছে মাছ। এতে বাস্তুতন্ত্রের ওপর আঘাত হানছে। সুন্দরবেনর আয়তন মোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। এর ৬২ শতাংশ বাংলাদেশে আর ৩৮ শতাংশ ভারতে পড়েছে। এটি পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় অবস্থিত। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার কিছু এলাকা এ বনের বাংলাদেশ অংশ। সুন্দরবন ১৯৯২ সালে রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়। পরে ১৯৯৭ সালে একে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।


সুন্দরবন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঢাল হিসেবেই শুধু কাজ করে না, এর ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করে বেঁচে থাকে লাখ লাখ মানুষ। সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঠ-গাছপালা থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র যেমন তৈরি হয়, তেমন নিউজপ্রিন্ট, দিয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা প্রভৃতিও তৈরি করার উপাদান সংগ্রহ করা হয় এখান থেকে। এখান থেকে আহরিত মধু এখন বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। সুন্দরবন সব সময় তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারে না। ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে। যেমন সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ১৩৪টি হরিণ, ৪টি বন্যশূকর মারা গেছে। পুরো সুন্দরবন টানা ৩৬-৩৭ ঘণ্টা লবণাক্ত পানির নিচে থাকায় অনেক গাছপালা মারা গেছে।




এ ছাড়া নদী ভাঙন, অবৈধ বসতি, গাছ কাটার ফলে সুন্দরবন থেকে হারিয়ে গেছে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ২০২০ সালে বিশ্ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০০ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমে হয়েছে ১১ হাজার ৯০৪ বর্গকিলোমিটার। ১৯০৪ সাল থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের আয়তন ছিল ১১ হাজার ৯০৪ বর্গকিলোমিটার। ১৯৬৭ সালে হয় ১১ হাজার ৬৬৩ বর্গকিলোমিটার। ২০২৪ সালে বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এলাকা মিলিয়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। একদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে সুন্দরবনের নিজস্ব এলাকা। অন্যদিকে বনের ভেতর দিয়েই মানুষ চলাচলের রাস্তা-ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। যে বৃক্ষের নামে সুন্দরবন সেই সুন্দরী বৃক্ষই কমে গেছে ২৮.৭৫ ভাগ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনমতে, সুন্দরবনের চারদিকে ১০ কিলোমিটার এলাকা সংকটাপন্ন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করলেও মানা হচ্ছে না কিছুই। বিভিন্ন স্থাপনা যেমন রিসোর্ট, কটেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সুন্দরবন দূষণের আরেকটি বড় কারণ নদী ও খালে জাহাজের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল। কারণ এসব জাহাজ চলাচলে তেল নিঃসরণ হচ্ছে। সুন্দরবনে প্রায়ই আগুন লাগে। পানিপ্রবাহও আগের মতো নেই। শুষ্ক অঞ্চলে পানিপ্রবাহ কমে যায় প্রায় ৪০ শতাংশ। এতে লবণাক্ততা বেড়ে গেছে। গত ২৫ বছরে ঘন বনের পরিমাণ কমেছে ২৫ শতাংশ।


 গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন


কিন্তু সুন্দরবনের নানা বন্য প্রাণী তথা বাঘ কতটা সংরক্ষিত? কিছুদিন আগেও শরণখোলায় একটি বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করেন খোদ বনরক্ষীরা। একটি তথ্যমতে সুন্দরবনে প্রথম বাঘজরিপ হয় ২০১৩-১৪ সালে। সে সময় বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬। এক দশকে বাঘ কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। ২০০৪ সালে ছিল ৪৪০টি। তবে এ সংখ্যাটি বাংলাদেশ ও ভারত দুই অংশের সুন্দরবন মিলিয়ে। ২০১৮ সালে বাঘশুমারিতে পাওয়া গিয়েছিল ১১৪টি। ২০০১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে কমপক্ষে ৪৬টি বাঘ মারা হয়েছে। সুন্দরবনে একসময় ৪০০ প্রজাতির পাখি বাস করলেও এখন মাত্র ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।


সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী বসবাস করে। এর মধ্যে হরিণ, বানর, শূকর, শজারু, গুঁইসাপ বাঘের খাদ্য। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার সংক্ষেপে আইইউসিএনের জরিপ অনুযায়ী হরিণসহ এ পাঁচ প্রজাতির সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৪ সালে চিত্রল ও মায়া হরিণের সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬০৪-এ। বানর ৫১ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪। বন্যশূকর ২৮ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ হাজার ৫১৫। সুন্দরবনে এবারই প্রথম জরিপ করা হয় গুঁইসাপ ও শজারু। গুঁইসাপ দেখা গেছে ২৫ হাজার ১২৪টি আর শজারু পাওয়া গেছে ১২ হাজার। সুন্দরবনের এখন সব বন্য প্রাণীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯২৮। খুশির খবর হলো, বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে এ সংখ্যাটি জানানো হয়। ২০২৪ সালে অনিবার্য কারণে জুলাইয়ের সংখ্যা জানা না গেলেও আগস্টে জানা যাবে বলা হয়েছে। তখন হয়তো সংখ্যার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা যাবে।


বন বিভাগ সুন্দরবন রক্ষায় কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে। যেমন সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প। এসবের মাধ্যমে অভয়ারণ্য এলাকা বাড়ানো হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে রাসমেলা বন্ধ করে শুধু পুণ্যস্নান ও রাসপূজার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বন্য প্রাণীর প্রজননকালে বনজদ্রব্য সংগ্রহ ও পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে; যাতে বন্যপ্রাণীর প্রজনন বাধাগ্রস্ত না হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র ও বাংলাদেশে সুন্দরবনের মোট এলাকার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০ থেকে ২৫০টি বাঘ থাকা দরকার। একসময় অধিকাংশ দেশে বাঘ পাওয়া গেলেও এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৩ দেশে একে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে গত ১০০ বছরে বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমলেও এর সংখ্যা এখন বাড়ছে। সুন্দরবনের আবাসস্থলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও শিকারিদের দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে অচিরেই এর সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে বলে আশা করা যায়।


শিক্ষক ও গবেষক


হাতি হত্যা কি বন্ধ করা যাবে না ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 

হাতি হত্যা কি বন্ধ করা যাবে না

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

বাংলাদেশে যে হাতিটি দেখা যায় এটিকে এশিয়ান এলিফ্যান্ট বা এশীয় হাতি বলে। এই এশীয় হাতি ১৩টি দেশে দেখা যায়। বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৪ সাল থেকে পরবর্তী ১৭ বছরে বাংলাদেশে হাতি হত্যা করা হয়েছে ১১৮টি। আরেকটি তথ্য অনুযায়ী হাতি-মানব দ্বন্দ্বে ২৩৬ জন মানুষ মারা গেছে।

আইইউসিএন-এর তথ্য অনুয়ায়ী বাংলাদেশে তিন ধরনের হাতি দেখা যায়। কিছু হাতি তাদের আবাসস্থলে বাস করে। কিছু হাতি পরিব্রাজন করে। কিছু হাতি পোষ মানা।

বন্য হাতি যারা, তারা তাদের আবাসস্থলে বাস করে, তাদের সংখ্যা ২৬৮। পরিব্রাজনকারী হাতির সংখ্যা ৯৩। পোষ মানা হাতির সংখ্যা ৯৬। বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত পাঁচ শর মতো হাতি ছিল।

সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী এই হাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৮ থেকে ৩২৭-এ। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২৬৩টি, যার ৫৫ ভাগই কক্সবাজার এলাকার। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ছাড়াও মানব-হাতি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে শেরপুর, জামালপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গায়। 

প্রতিবছর শ্রীলঙ্কায় ২০০ হাতি হত্যা হয়। ভারতে মানুষ-হাতি সংঘর্ষে মারা পড়ে বছরে ১০০ হাতি।

কেনিয়ায়ও এই সংখ্যা বছরে ১২০-এর বেশি। ডাব্লিউডাব্লিউএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী মানুষ-বন্য প্রাণী দ্বন্দ্ব পৃথিবীর অনেক প্রজাতির প্রাণীর টিকে থাকার জন্য এখন হুমকিস্বরূপ। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এসবের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে বন্য বিড়াল প্রজাতির ওপর। এদের ওপর প্রভাব ৭৫ শতাংশেরও বেশি। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাংসাশী প্রাণী এবং হাতির ওপরও এসবের ক্ষতিকারক প্রভাব বেশ দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১২টি হাতি চলাচলের জায়গা রয়েছে। কিন্তু এই রাস্তাগুলো হাতি চলাচলের উপযুক্ত নয়। হাতি বেঁচে থাকার জন্য এই পরিব্রাজনের রাস্তাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিন দিন এসব জায়গা সংকুচিত হচ্ছে।

অনেক দেশেই হাতির বিচরণক্ষেত্রে মানুষ বসবাস করে। তাদের বন্য প্রাণীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় জমি, খাদ্য, পানি ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে। এসব মানুষ হাতির বিচরণ এলাকা কতটুকু বা অন্যান্য বন্য প্রাণী কোথায় বিচরণ করে এসব নিয়ে অসচেতন। ক্রমেই হাতি বসবাসের এলাকায় নতুন গ্রাম, খামার, শহর, বড় রাস্তা, শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। হাতির যাতায়াতের পথে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। বনভূমি কৃষিভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। হাতিরা নতুন নতুন এলাকায় ঢুকে পড়ছে এ কারণে। পানি ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে মানুষ বড় বড় বিপদের মুখে পড়ছে। হাতি তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী। এটি দিনে ১৫০ কিলোগ্রাম ঘাস এবং ১৯০ লিটার পানি পান করে। এ জন্য তাকে খাদ্য ও পানীয়ের জন্য বড় একটা এলাকা ঘুরে বেড়াতে হয়। একটি বড় পুরুষ হাতি ওজনে ছয় হাজার ৮০০ কিলোগ্রাম হয়, যা অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের থেকে ১০০ গুণ বেশি ভারী। যখন হাতি নিজে হুমকির মুখে পড়েছে মনে করে তখন সে মানুষকে আঘাত বা হত্যা করে, ঘরবাড়ি ও সম্পদ বিনষ্ট করে। হাতির কবলে পড়ে অনেক কিছুরই ক্ষতি হয়ে থাকে। ভারতেই প্রতিবছর হাতির কারণে পাঁচ লাখ পরিবারের শস্যের ক্ষতি হয়। ফলে এসব পরিবার প্রচণ্ড আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এবং স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাবে পড়ে।

২০২১ সালে দেওয়া আইইউসিএন-এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে আগের ১৭ বছরে ৯০টি হাতি হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে হত্যা করা হয় ১১টি হাতি। কোনোভাবেই এই হত্যা কমানো যাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী হাতি হত্যাকারীর শাস্তি দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড। তবে আত্মরক্ষার্থে হত্যার ক্ষেত্রে এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু এসব বিধান প্রতিপালনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। সম্প্রতি এক সেমিনারে বাংলাদেশে নভেম্বর মাসেই চট্টগ্রাম ও শেরপুরে আটটি হাতি হত্যা করা হয় বলে জানা যায়। এগুলো হয় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে, না হয় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মারা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হতে বাধ্য। তাই এই মুহূর্তে হাতি হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

 

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক 

 

শুশুকের অসুখ ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 




প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৪

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্রবেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের দৈনিকগুলোয় হালদা নদীতে ডলফিন মারা যাওয়ার খবর প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে দুই প্রজাতির ডলফিন রয়েছে। একটিকে গাঙ্গেজ ডলফিন বলা হয়, আরেকটি ইরাবতী ডলফিন। গাঙ্গেজ ডলফিনকেই শিশু বা শিশুক বা শুশুক বলা হয়। এটি মূলত মিঠাপানির ডলফিন। আর ইরাবতী ডলফিন সাগর বা সাগর নিকটবর্তী নদীতে পাওয়া যায়। হালদা নদীর ডলফিনকে শুশুক বলা হয়। এটি গাঙ্গেজ ডলফিন।

হালদা নদী বাংলাদেশের পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এটি খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলায় পড়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৩৪ মিটার। নদীটি দেখতে সর্পিলাকার। হালদা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র। এই নদীতে জোয়ার-ভাটা ঘটে। মিঠাপানির মাছ এই নদীতে ডিম ছাড়ে। হালদা পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী, যেখানে কার্পজাতীয় মাছ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ডিম পাড়ে। সেই ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোথাও এমন নদী নেই, যেখান থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ডলফিন পাওয়া গেছে ১৬৭টি, ২০২০ সালে ১২৭টি। গাঙ্গেয় ডলফিন পৃথিবীর বিপন্ন প্রজাতির একটি। এর মধ্যে হালদায় রয়েছে ১৭০টি। এই ডলফিন গঙ্গা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও কর্ণফুলীতে পাওয়া যায়। ভারত ও নেপালেও এটি দেখা যায়। শুশুকের মুখের চোয়াল সামনের দিকে বাড়ানো, প্রতি চোয়ালে ২৮ থেকে ২৯টি দাঁত থাকে। পুরুষ শুশুক থেকে বড় স্ত্রী শুশুক। স্ত্রী শুশুক গড়ে ২.৪ থেকে ২.৬ মিটার লম্বা। আর পুরুষ শুশুক গড়ে ২ থেকে ২.২ মিটার লম্বা। এরা কিন্তু ডিম পাড়ে না। সন্তান প্রসব করে এবং স্তন্যদান করে।

বাংলাদেশে শুশুককে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় রাখা হয়েছে। একটি তথ্যমতে, এই প্রজাতির সংখ্যা সারা বিশ্বে প্রায় ৩ হাজার। বাংলাদেশে বাস করে পৃথিবীতে বাস করা মোট প্রজাতির এক-তৃতীয়াংশ; অর্থাৎ সুন্দরবনে ২২৫, পদ্মা-যমুনায় ২০০, কর্ণফুলী, সাঙ্গু, সুরমা, হালদায় প্রায় ৫০০টি। ডলফিনকে পানির ওপরে সাঁতরাতে ও লাফাতে বেশি দেখা যায়। এরা ৩-৪ মিনিট পরপর পানির ওপরে উঠে শ্বাস নেয় আর ছাড়ে। এই ডলফিনের কিছু মজার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরা চোখে দেখতে পায় না। তীক্ষ্ণ শব্দ ছোড়ার মাধ্যমে শিকার খোঁজে। এদের ওজন ১৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দুই-তিন বছরে একবার বাচ্চা দেয়। এর গড় আয়ু ২০ থেকে ২২ বছর।

এই শুশুক কিন্তু মানুষের বন্ধুও বটে। অনেক জেলে শুশুক দিয়ে মাছ শিকার করে। এমন বন্ধু শুশুককেও মানুষ নির্বিচারে হত্যা করে। অথচ শুশুক মানুষের কোনো ক্ষতিই করে না। এ ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রায়ই মা ও বাচ্চা শুশুক মরে ভেসে উঠতে দেখা যায়। এর কারণ, শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে সার কারখানার অ্যামোনিয়া বর্জ্যের আধিক্য। একটি তথ্যমতে, ২০২২ সালে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেই মৃত ডলফিন পাওয়া যায় ১৮টি। ২০২১ সালে পাওয়া যায় ২৪টি।

সুন্দরবনে ডলফিন রক্ষায় ৬টি অভয়ারণ্য রয়েছে। ডলফিন রক্ষায় সরকারেরও অ্যাকশন প্ল্যান রয়েছে। তা সত্ত্বেও এর মৃত্যু কিন্তু থেমে নেই। আইইউসিএনের বিপন্ন তালিকায় থাকা এই শুশুক রক্ষা করতে না পারলে একদিন এটি হয়তো হারিয়েই যাবে। তাই শুশুকের এই অসুখ আমাদের সারাতেই হবে। এ জন্য ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র—সব জায়গা থেকেই শুশুক রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি। 

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র, শিক্ষক ও গবেষক

বিপন্ন হালদা মনুষ্যসৃষ্ট অপরিনামদর্শিতার অভিঘাত

 বিপন্ন হালদা

মনুষ্যসৃষ্ট অপরিনামদর্শিতার অভিঘাত

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৭ পিএম

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

২০১৭ সালে তৌকীর আহমেদ ‘হালদা’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন, যেখানে দেখানো হয়েছিল হালদা নদীর দূষণ আর হালদার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা শত শত জেলের দুঃখীজীবনের দৃশ্য। এরপর কেটে গেছে প্রায় ৭ বছর। জেলেদের কান্না এখনও থামেনি। থামেনি নদীর কান্নাও। হালদা বাংলাদেশের পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। এটি খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলায় পড়েছে। এর দৈর্ঘ্য ১০৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৩৪ মিটার। এ নদীটি দেখতে সর্পিলাকার। হালদা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এ নদীতে জোয়ারভাটা ঘটে। মিঠা পানির মাছেরা এ নদীতে ডিম ছাড়ে। হালদা পৃথিবীর একমাত্র জোয়ারভাটার নদী যেখানে কার্পজাতীয় মাছ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ডিম পাড়ে। সে ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোথাও এমন নদী নেই, যেখান থেকে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়।

এটি একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র যেখানে রুই বা কার্প জাতীয় মাছ ডিম পাড়ে আর তা সংগ্রহ করে জেলেরা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এপ্রিল, মে, জুনÑএ তিন মাসের যেকোনো সময় এ মা মাছেরা ডিম ছাড়ে। হালদা রুই, কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি ভারতীয় অঞ্চলের কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হওয়ায় হাজার হাজার জেলে এখান থেকে ডিম ও পোনা সংগ্রহ করে। সেগুলো পরে তারা বিক্রি করে। এ পোনা থেকেই আমরা বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেল পেয়ে থাকি। অন্যভাবে বলতে গেলে, হালদার কারণেই কোটি কোটি বাঙালির আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ধারণা করা হয়, হালদা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনীতিতে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখছে। হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে হালদা থেকে ১৮ হাজার কেজি কার্পজাতীয় মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়।

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্যমতে, ২০১৮ সালে ডলফিন পাওয়া গেছে ১৬৭টি, ২০২০ সালে ১২৭টি। গাঙ্গেয় ডলফিন পৃথিবীর বিপন্ন প্রজাতির একটি। পৃথিবীতে এর সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১০০। এর মধ্যে হালদায় রয়েছে ১৭০টি। আরেকটি বড় বিষয় বলতে গেলে চট্টগ্রামের একমাত্র সুপেয় পানির উৎস হালদা নদী। এখান থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম ওয়াসা ১৮ কোটি লিটার পানি সংগ্রহ করে; যা ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচায়। অথচ এ নদীকে সইতে হচ্ছে কত অত্যাচার! এর বুকে এর আগে রাবার ড্যাম বসানো হয়েছে। নদীর পারে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা। সেখানকার বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। হাঁস-মুরগির খামার করা হচ্ছে। ডলফিনের অন্যতম আবাসস্থল হালদা হলেও দূষণের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে এর সংখ্যা। নদীর পানিপ্রবাহ যেমন কমে যাচ্ছে, তেমন পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে নিচে। একটি তথ্যমতে, হালদায় নানা রকম বর্জ্য ফেলার কারণে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। হালদার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে অন্তত ৫ মিলিগ্রাম। এর আগে কখনও কখনও এটি ০.২১ থেকে ১ মিলিগ্রামও দেখা গেছে।

সম্প্রতি আবারও অক্সিজেনের পরিমাণ লিটারে ৩.৬ মিলিগ্রামে নেমে এসেছে। এ ছাড়া কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এর আগে পরীক্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে আ্যামোনিয়ার পরিমাণও ১০০ গুণ বেশি দেখা গিয়েছিল। ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে। মারা যাচ্ছে মা মাছ ও ডলফিন। হালদা নদী থেকে ২০১৬ সালে একেবারেই ডিম সংগ্রহ করা যায়নি। কেন ও কীভাবে দূষিত হচ্ছে এ হালদা? ২০২৪ সালে এসে আবার কেন মৃত্যুর মিছিল? কেন মৃত্যু থামছেই না হালদার মা মাছ ও ডলফিনের? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদী ও খালের সংযুক্ত স্থলে পানি এতটাই দূষিত হয়েছে যে, সেগুলো কালো রঙ ধারণ করেছে। কারখানার কালো পানি কাটাখালী, খন্দকিয়া ও কৃষ্ণ খাল হয়ে হালদায় মিশে এ দূষণ ঘটাচ্ছে। পোল্ট্রি, গৃহস্থালি, শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীতে এসে পড়ছে বলেই পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ড্রেজারের আঘাতেও অনেক ডলফিন মারা যায় বলে খবরে প্রকাশ।

হালদা বাঁচানোর জন্য চেষ্টাও কম হয়নি। ২০২০ সালে এটিকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেখানকার মাছ ও জলজ প্রাণী শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট হালদা নদী রক্ষায় একটি কমিটিও গঠন করে দেয়। তাতেও ঠেকানো যাচ্ছে না কারেন্ট জালের ব্যবহার। হালদাকে বাঁচানোর জন্য হাটহাজারীতে ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ করা হয়। এশিয়ান পেপার মিল বন্ধ করা হয়। নদীরক্ষায় চারপাশে আটটি সিসি ক্যামেরা বসানো হলে বেশ কাজে দিলেও কিছু ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য আগের মতোই মাছ নিধন চলছে। ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছিল ২০২১ সালে। নৌপুলিশ এ ক্যামেরা বসিয়েছিল। এগুলো দিয়ে নজরদারি করা যেত প্রায় ১০ কিলোমিটার। ক্যামেরায় কোনো কিছু নজরে এলেই স্পিডবোট দিয়ে পুলিশ অভিযান চালাত। এতে মাছ নিধন, বালু উত্তোলন এসব বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালে ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহ করা হয়। সম্ভবত এসব উদ্যোগের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল।

এখন হালদায় আবারও মা মাছের মৃত্যু দেখা যাচ্ছে। জুন শেষ হলেও এখনও মা মাছ ডিম ছাড়েনি। এ ছাড়া ডলফিনও মারা যাচ্ছে। একটি তথ্যমতে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪১টি ডলফিনের মৃত্য হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ থেকে ৩০টি বড় মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসেবে দূষণকেই দায়ী করছেন। তাদের মতে, কয়েকটি খাল হয়ে নগরের বর্জ্য হালদায় পড়ছে। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার বেশি হওয়ায় বিষের প্রয়োগেও মা মাছের মৃত্যু ঘটছে। হালদায় ভালো পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

শিক্ষক ও গবেষক


বন্যা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

 বন্যা

বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫ এএম

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

বন্যা হলোÑযেখানে পানির প্রবাহ স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে। কোনো নদী থেকে সৃষ্টি হয়ে সমতলভূমিকে প্লাবিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের বন্যা ভিন্ন। এখানে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় প্রভৃতি পানিতে ভেসে যায়। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ডুবে যায়। বাংলাদেশে মূলত তিন ধরনের বন্যা দেখা যায়। এগুলো হলো মৌসুমি বন্যা, আকস্মিক বন্যা ও জোয়ারে সৃষ্ট বন্যা। মৌসুমি বন্যা হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ে। এতে নির্দিষ্ট এলাকা প্লাবিত হয়। ফসল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। আকস্মিক বন্যা হয় পাহাড়ি ঢল বা হঠাৎ অনবরত বৃষ্টি থেকে। আর জোয়ারের সময় যে বন্যা হয় তাকে জোয়ারের ফলে সৃষ্ট বন্যা বলে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। অর্থাৎ ১৮ শতাংশ এলাকা বন্যার কবলে পড়ে। বন্যা ব্যাপকভাবে হলে ৫৫ শতাংশ ডুবে যায়। বাংলা অঞ্চলে প্রতি শতাব্দীতেই অর্ধডজন বন্যা দেখা গেছে। এসব বন্যা ভয়াবহ বন্যা হিসেবেই স্বীকৃত।

বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেকবারই বন্যার দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম বন্যা দেখা যায় ময়মনসিংহে ১৯৭৪ সালে। সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা যায় ১৯৮৮ সালে। এর আগে ১৯৮৭ সালের বন্যায়ও কম ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্বাধীনতার আগে এ অঞ্চলে ১৭৮১, ১৭৮৬, ১৭৯৪, ১৮২২, ১৮২৫, ১৮৩৮, ১৮৫৩, ১৮৬৪, ১৮৬৫, ১৮৬৭, ১৮৭১, ১৮৭৬, ১৮৭৯, ১৮৮৫, ১৮৯০, ১৯০০, ১৯০২, ১৯০৪, ১৯১৫, ১৯৫৫, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৬৯ সালে স্মরণ করার মতো বন্যা হয়েছে। সম্প্রতি গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দি এনভায়রনমেন্ট এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যায় ৫৫-৬০ শতাংশ জলমগ্ন হয়। এতে ১ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের ক্ষতি হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে এও বলা হয়, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ বন্যার উচ্চঝুঁকিতে আছে। এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে বলে বলা হয়েছে এবং এ থেকে ভয়াবহ বিপর্যয়ও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

বন্যার কারণে বন্য প্রাণী মূলত স্থানান্তরিত হয়। এরা উঁচু জায়গায় অবস্থান করে। কখনও কখনও বন্যার সময় বন্য প্রাণীরা গাছে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে কোনো দ্বীপে অবস্থান করে। এরা বন্যার পানি চলে না যাওয়া পর্যন্ত বেশ কিছুদিন এভাবে থাকতে পারে। তারপর পানি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তরিত হয়। এ সময় বন্য প্রাণীরা খাবারের জন্য মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কেননা বন্যাদুর্গত এলাকায় তারা সহসাই যেতে পারে না। এ সময় তাদের মধ্যে পুষ্টির অভাব ঘটে। অনেক সময় বিষাক্ত খাবারও তারা খেয়ে ফেলে। বন্য প্রাণীর মধ্যে রোগবালাই ছড়াতে থাকে। অনিরাপদ খাদ্য খাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আগ্রাসি বন্য প্রাণী দুর্বল প্রাণীদের ওপর চড়াও হয়। বিপদাপন্ন প্রজাতি বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ে যায়। অনেক দেশে বন্যার সময় ক্যাঙ্গারুরা রাস্তায় উঠে পড়ে। এ সময় তারা সড়ক দুর্ঘটনায পড়ে। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পানিপ্রবাহের কারণে যেসব বন্য প্রাণী গাছের খোঁড়লে, মাটির গর্তে বাসা বানিয়ে থাকত, সেসব বাসা নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার কারণে অনেক নিশাচর প্রাণীকে দিনের বেলায়ও দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী উদ্ধারকর্মীদের জানা থাকতে হবে কীভাবে বন্যার সময় বন্য প্রাণী উদ্ধার করতে হয়। সাময়িক সময়ের জন্য উঁচু জায়গা তৈরি করা দরকার। এ সময় অনেক বন্য প্রাণী আহত হয়ে পড়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে এ ধরনের বন্য প্রাণীর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার সময় অনেক সাপ মারা পড়ে। দেখা যায় অধিকাংশ সাপই বিষাক্ত নয়।

 গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

মানুষ আতঙ্কে এসব সাপ মেরে ফেলে। কোন ধরনের সাপ বিষাক্ত এবং কোনটি নয় তা জানা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। বিড়াল ও শিয়াল বন্যার সময় লোকালয়ে আশ্রয় নেয়। অধিকাংশ গ্রামবাসীর মধ্যে এসব মেরে ফেলার আশঙ্কা থাকে। লোকালয়ে আশ্রয় নেওয়া বন্য প্রাণী হত্যা না করে বন বিভাগকে জানাতে হবে। বন্যার সময় জলজ প্রাণী বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোয় কুমিরকে বন্যার সময় লোকালয়ে এসে পড়তে দেখা যায়। পোকামাকড়, বাদুড়, পাখি উড়তে জানে বিধায় এরা অন্য জায়গায় সহজেই স্থানান্তরিত হতে পারে। তবে বেশি বৃষ্টিপাত হলে অনেক পাখিই উড়ে যেতে পারে না। তারা আশ্রয় খোঁজে। এ সময় পাখি বিপদসংকুল অবস্থায় থাকে। বিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি এ পাখিকে খেয়ে ফেলে। কিছু গিরগিটি ও ব্যাঙ গাছে উঠতে পারে। এরা নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে অন্য কারও সহায়তা ছাড়াই।

বন্যার সময় বড় যে অসুবিধাটা হয় তা হলো, সুপেয় পানির অভাব। বন্যার পানি অনেক বিষাক্ত হয়। এ পানি পান করে অনেক বন্য প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে মাছ মরে যায়। এ কারণে খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। খাদ্যশৃঙ্খল কিছুটা ভেঙে পড়লেও অধিকাংশ বন্য প্রাণী এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভিযোজিত। যে বন্য প্রাণীগুলো কোনো কারণে বিপদগ্রস্ত হয়, সেই বন্য প্রাণীগুলো নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। যতটুকু সম্ভব তাদের ধরে নিরাপদ জায়গায় রেখে আসতে হবে। অল্প কিছু এলাকায় হালকা বন্যা হলে বন্য প্রাণীরা অভিযোজিত হতে পারে। কিন্তু মারাত্মক বন্যা বন্য প্রাণীর ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে। বন্যার পানি পাখির বাসা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ছোট ছোট প্রাণী যারা নিচু এলাকায় থাকে তারা ডুবে যায়। বন্যায় বন্য প্রাণীরা সাধারণত উঁচু এলাকায় চলে যায়। সাপ আশপাশের কোনো জায়গায় আশ্রয় নেয়। এমন জায়গায়ও আশ্রয় নিতে দেখা যায় যেখানে সাপ গত কয়েক বছরে যায়নি। আবহাওয়ার হঠাৎ কোনো পরিবর্তন হলে সাপ শুষ্ক এলাকায় চলে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্য প্রাণীদের এমন আচরণ সাময়িক সময়ের জন্য দেখা যায়। মাছরাঙা সাধারণত বালুতীরে বাসা বাঁধে। কারণ বালুমাটি নরম হওয়ায় সহজেই গর্ত খুঁড়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারে। এটা করে যেন কোনো শিকারি তাদের খুঁজে না পায়। বন্যার ফলে এ ধরনের পাখির বাসা সহজইে ধ্বংস হয়ে যায়। ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যখন স্থান পরিবর্তন করে বন্যার সময়, তখন তারা শিকারের কবলে পড়ে।

শিক্ষক ও গবেষক


সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে বন্যার প্রভাব ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 



সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে বন্যার প্রভাব

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র


বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বন সুন্দরবন। এটি ম্যানগ্রোভ বন নামেও পরিচিত।  এর আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। মোট আয়তনের ৪.০৭ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন।

এসব বনের বেশির ভাগ এলাকায় জোয়ার-ভাটা হয়। ফলে এই বনের গাছপালা বেশ লবণাক্ততা সহনশীল হয়ে থাকে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, ধুন্দুল, কেওড়া, গোলপাতা ইত্যাদি এই বনের প্রধান বৃক্ষ। এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্য প্রাণী হলো বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর ইত্যাদি।

সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণীর বসবাস। এর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর ও মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী আছে। এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির বাস। একটি তথ্য মতে, সুন্দরবনে হুমকির মুখে আছে দুই প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।১৯৯৬ সালে সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে এখানে তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য করা হয়। ২০১৪ সালে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়।  ১৯৯২ সালে এটি ৫৬০তম রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

উপকূলবর্তী হওয়ায় এই বনটি সমুদ্র দ্বারা প্রভাবিত। সৈকত, মোহনা, জলাভূমি, মাটির প্রকৃতির কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে। এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। ইউনেসকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন সময়ে আইলা, আম্ফান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বনে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যায়। এতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সুন্দরী, কেওড়া, গোলপাতাসহ বিভিন্ন গাছ মারা যায়। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণেও সুন্দরবনের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় উঁচু জোয়ার হয়। জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটে। স্বাদু পানির উৎস শতাধিক পুকুর তলিয়ে যায়। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিমালের আঘাতের পর ১৩২টি মৃত বন্য প্রাণী উদ্ধার করে বন বিভাগ। এর মধ্যে ১২৭টি মৃত হরিণ, চারটি মৃত বন্য শূকর ও একটি অজগর রয়েছে।

সম্প্রতি পূর্ণিমার জোয়ার, ভারি বৃষ্টি ও পূর্বাঞ্চলের বন্যার কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে পানির চাপ বেড়েছে। সেখানে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। কয়েক ফুট উচ্চতার পানিতে সুন্দরবন তলিয়ে যায়। সেখানে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসও হয়। তবে কোনো বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উঁচু টিলা থাকার কারণে বন বিভাগও বন্য প্রাণীর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে না বলে পত্রিকায় প্রকাশ।

গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বন্যা সংকট আরো ভয়াবহ হতে পারে।

এ অবস্থায় সুন্দরবনের বন্য প্রাণীদের জন্য উঁচু টিলা ও শেল্টার রাখা হলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্য প্রাণী বাঁচিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া সুন্দরবনে যেহেতু মিঠা পানির অভাব, তাই সেখানে মিঠা পানির যেসব উৎস রয়েছে, যেমন—পুকুর, সেসবের পার উঁচু করে দিতে হবে। বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে আরো দক্ষ হতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক

 


অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ বন্য প্রাণী ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 



অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে জলজ বন্য প্রাণী

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র 

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র জলজ প্রাণী বলতে সেসব প্রাণীকেই বোঝায় যারা মেরুদণ্ডী বা অমেরুদণ্ডী, জীবনচক্রের সমস্ত বা বেশির ভাগ সময় জলে কাটায়। জলজ প্রাণীরা সাধারণত ফুলকা বা ত্বকের মাধ্যমে শ্বাসকার্য চালায়। মোট প্রাণী প্রজাতির ৪০ ভাগের আশ্রয়স্থল জলাভূমি। প্রতিনিয়ত এসব জায়গা থেকে নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল বড় একটা প্রাণী প্রজাতি জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল।

প্রায় ৬৪ প্রজাতির উভচর তো বটেই, ৮৩ প্রজাতির সৈকত পাখি, ৩০ প্রজাতির বুনোহাঁস, ৮ প্রজাতির শামুকখোল, ১৮ প্রজাতির বগলাসহ অসংখ্য প্রজাতি জলাভূমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ ছাড়া প্রতিবছর শীতের সময় বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে, যাদের আবাসস্থল ও খাবার দুটোই জলাভূমিকে কেন্দ্র করে।

বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে বোঝায় স্যাঁতসেঁতে জলনিমগ্ন ভূমি, যার পানি মিঠা বা নোনা হতে পারে, তা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম হতে পারে এবং স্রোতহীন বা ৬ মিটার গভীর হতে পারে। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট, স্থায়ী বা অস্থায়ী, স্থির বা প্রবহমান পানিরাশিবিশিষ্ট স্বাদু, লবণাক্ত বা মিশ্র পানির এলাকা বোঝায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের জলাভূমি গত ৫০ বছরে ৭০ ভাগ কমে গেছে। ১৯৭১ সালে জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৯৩ লাখ হেক্টর, তা কমে এখন হয়েছে ২৮ লাখ হেক্টরে। অর্থাৎ ৬৫ লাখ হেক্টর জলাভূমি কমেছে।

বিশ্বের দিকে তাকালেও এমন চিত্র চোখে পড়বে। বিশ্বের মোট জলাভূমির প্রায় ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়েছে। বাকি জলাশয়গুলোও হুমকির মুখে রয়েছে। নদী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী প্রবহমান নদীর সংখ্যা ৯৩১টি। ৩০৮টি নদী নাব্যতা হারিয়েছে।

৩০৮টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগে নাব্যতা হারানো নদীর সংখ্যা ৮৫টি, রংপুরে ৭১টি, রাজশাহীতে ১৮টি, চট্টগ্রামে ১১টি, সিলেটে ১০টি ও ময়মনসিংহে ২৬টি এবং খুলনা বিভাগে ৮৭টি। বাংলাদেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমি নদী।উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। আর দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীগুলো স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জলজ জীববৈচিত্র্য এখন মারাত্মক হুমকির মধ্যে।

২০২২ সালে আরডিআরসির দেওয়া তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ গড়ে লিটারপ্রতি ২ মিলিগ্রামের নিচে। এর অর্থ হচ্ছে, পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী বাঁচার জন্য দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ থাকতে হয় লিটারপ্রতি ৪ মিলিগ্রাম। বুড়িগঙ্গা নদীর জলজ প্রাণীর অবস্থা বুঝতে বোধকরি আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই।

তারা মোট ৫৬টি নদী নিয়ে গবেষণা করেছিল। ৫৬টি নদীর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীর অবস্থা খুবই ভয়াবহ দেখা গেছে। ঢাকা বিভাগের ১৯টি নদীই মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) তথ্য মতে, বুড়িগঙ্গা নদীর পানি প্রায় অক্সিজেনশূন্য। লিটারে তারা অক্সিজেনের মাত্রা পেয়েছে মাত্র ০.৬ মিলিগ্রাম।

শুধু নদী নয়, বঙ্গোপসাগরও দূষণের কবলে। কুয়াকাটা পটনকেন্দ্রের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে জলজ স্তন্যপ্রাণী মরে ভেসে ওঠে। ২০২০ সালে সৈকতের ১৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাঁচ-ছয়টি তিমি ও শুশুক মরে পড়ে থাকে। পটকাসহ বিভিন্ন মাছও মরে পচে থাকতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি জাহাজের পোড়া মোবিল সাগর দূষিত করছে। এসব মোবিল বা তেল পানিতে মিশে সাগরের পানি দূষিত করছে। এতে সাগরের জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়ে। ভেঙে পড়ে সাগরের জলজ বাস্তুতন্ত্র।

বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে জলাশয় হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলো হলো: শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ, জলাশয়ে পয়ঃপ্রণালি স্থাপন, বিভিন্ন তরল ও কঠিন বর্জ্য নির্গমন, বালু-পাথর আহরণ ইত্যাদি। এ ছাড়া ঝিনুক, কোরাল, মাছ, কচ্ছপ প্রভৃতি ধরা-মারাও জলাশয়ের ওপর মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করছে। এসব জলজ প্রাণী বাঁচাতে আমাদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। করতে হবে দূষণমুক্ত।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক 

আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

 

×
উপকূলীয় বন ধ্বংস

আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বন্ধ হোক

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৯ এএম

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

ড. বিভূতিভূষণ মিত্র

রাস্তার ধার ও বেড়িবাঁধ বরাবর গাছপালা লাগিয়ে যে বেষ্টনী করা হয় তা-ই সবুজ বেষ্টনী। উপকূলবরাবর বৃক্ষ রোপণ করে যে বনায়ন করা হয় তা-ই উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী। জলোচ্ছ্বাস ও ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর আগে ১৯৬৬ সালে ম্যানগ্রোভ বনায়ন শুরু হয়। মূলত জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ থেকে রক্ষা এবং কৃষিজমি, জানমাল রক্ষায় উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরে ১৯৬৫ সাল থেকে বন সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাকে প্যারাবনও বলা হয়। নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও কক্সবাজার জেলায় এ প্যারাবন গড়ে উঠেছে, যা নানাভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে জানমাল ও দেশ রক্ষা করে যাচ্ছে। প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর ভূমিতে এ বন তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশের আয়তনের ১.৩৬%। বন অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত বনের পরিমাণ ১২.৫০%। এ প্যারাবনের কেওড়া, ছইলা, বাইন, গোলপাতা প্রভৃতি উদ্ভিদ প্রজাতি দেখা যায়। বন্য প্রাণীর মধ্যে হরিণ, মেছোবাঘ, শিয়াল ইত্যাদি রয়েছে। পাখিদের মধ্যে কালালেজ জৌরালি, দেশি গাঙচষা, কালামাথা কাস্তেচরা, খয়রাপাখ মাছরাঙার দেখা মেলে।

২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ১ লাখ ১ হাজার ৫৯৮ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকূলীয় এলাকায় ১১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৮ হাজার একর জমিতে বনায়ন করা হয়। আশির দশকে বনভূমির পরিমাণ দাঁড়ায় লক্ষাধিক একরে। বন বিভাগ ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ একর উপকূলীয় বনায়ন করে। বলা হয়, এটিই প্রথম বিশ্বের সর্ববৃহৎ উপকূলীয় বনায়ন প্রকল্প। একটি তথ্যমতে, ষাটের দশকে ১ হাজার ১০০ একর জমিতে ম্যানগ্রোভ জাতের গাছ লাগানো হয়। গেওয়া, কেওড়া, ছইলা এখানে উল্লেখযোগ্য। মূলত ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পরই উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কেননা এ ঘূর্ণিঝড়ে আমরা ব্যাপক মাত্রার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হই। এ ঝড়ে বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫০ কিমি। তখন সমুদ্র থেকে ২০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ঢেউ হয়েছিল। মানুষ মারা গিয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজারের মতো। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ২৪০ মিলিয়র মার্কিন ডলারের। এরপর ২০০৭ সালেও ঘূর্ণিঝড় সিডর হয়। এ সময় বরগুনা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে মারাত্মক জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। এতে সুন্দরবনের এক চতুর্থাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর আইলা, নার্গিস নামে ঘূর্ণিঝড় হলেও উপকূলীয় বেষ্টনী থাকায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কম হয়েছিল।

Rupali Bank

উপকূলবর্তী হওয়ায় এসব বন সমুদ্র দ্বারা প্রভাবিত। সৈকত, মোহনা, জলাভূমি, মাটির প্রকৃতির কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে। এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন সময় আইলা, আম্ফান ও ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বনে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যায়। এতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সুন্দরী, কেওড়া, গোলপাতাসহ বিভিন্ন গাছ মারা যায়। প্যারাবনগুলোর অবস্থাও তাই। বন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বনায়নের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর থেকে ১ হাজার ৬৮০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। উপকূলীয় চরাঞ্চলে ২ হাজার ৫২১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বনায়ন করা হয়েছে। এর ফলে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে দেশ। উপকূলের ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩ একর জমি শস্য উৎপাদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে। সবুজ বেষ্টনীর কারণে বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম ও মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বনজ সম্পদ সৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে কাজ চলছে। এর ফলে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার মানুষ নতুন উদ্যমে কাজ করার স্পৃহা পাচ্ছে।

Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন

বাংলাদেশে অধিকাংশ বন ধ্বংস হচ্ছে দখলের মাধ্যমে। বন বিভাগের তথ্যমতে, সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বন দখলে চলে গেছে। ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ২৫ হাজার একর বনভূমি দখল হয়েছে। এসব বন ধ্বংসের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্য প্রাণী। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশনের ২০১৫ সালের প্রতিবেদনমতে, বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণিপ্রজাতির সংখ্যা ৩১। ১৬০০ প্রাণিপ্রজাতির মধ্যে ৩৯০টি হুমকির মধ্যে রয়েছে। আর ৫০টির বেশি প্রজাতি ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী উপকূলীয় অঞ্চলের এসব বন প্রতিনিয়ত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বনাঞ্চল বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্বিচারে ধ্বংস করে যাচ্ছে বন। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ৩ সহস্রাধিক একর প্যারাবন কেটে ছোটবড় অর্ধশত চিংড়ি ঘের নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। পত্রিকায় জানানো হয়েছে, এ রকম কয়েক হাজার একর প্যারাবন ধ্বংস করে চিংড়ি ঘের বানানো হয়েছে। পরিবেশবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করলেও এসবের সুরাহা হচ্ছে না। এ ছাড়া বন কেটে কারখানা তৈরি, বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ, পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন করায় এসব বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ভূমিদস্যু ও অতিরিক্ত লোভী মানুষের জন্য বনাঞ্চলগুলো বিলীন হওয়ার পথে। ‘মহেশখালীতে প্যারাবন ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ’, ‘মহেশখালীর সোনাদিয়ায় প্যারাবন কেটে আরও চিংড়ি ঘের তৈরি’, ‘মহেশখালীতে প্যারাবন ধ্বংস করে ২৫০ একর ভূমি দখলের অভিযোগ’ এ রকম অসংখ্য প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর পরও এর বিরুদ্ধে আশানুরূপ কোনো উদ্যোগ কর্তৃপক্ষ নেয়নি। প্রকৃত আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। এভাবে প্যারাবন ধ্বংস হতে থাকলে মারাত্মক বিপর্যয়ের সামনে পড়বে মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। জানমাল রক্ষায় তাই প্যারাবন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বন ধ্বংসে যে আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড চলছে এর অবসান ঘটাতে হবে সময়ক্ষেপন না করে। এ ব্যাপারে চাই কঠোর অবস্থান।

  • শিক্ষক, পরিবেশ ও জলবায়ু গবেষক

সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষা জরুরি ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

 



সেন্ট মার্টিনের সুরক্ষা জরুরি

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র


বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপের নাম সেন্ট মার্টিন। এটি কক্সবাজার শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে। এর স্থানীয় নাম নারিকেল জিঞ্জিরা। সেন্ট মার্টিনের ডাব অত্যন্ত সুস্বাদু।

এখানে কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, কালাচাঁদা প্রভৃতি পাওয়া যায়। এখানে স্বচ্ছ পানিতে যেমন জেলিফিশ দেখা যায়, তেমনি নারকেলগাছের দীর্ঘ সারি মানুষকে আকৃষ্ট করে সহজেই।

একটি তথ্য মতে, এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করে। বলা হয়ে থাকে, আনুমানিক ৩০০ বছর ধরে এখানে মানুষ বসবাস করছে।

দিন দিন এই দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালে দ্বীপটিকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করলেও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেই চলেছে। মূলত প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত থাকে, যা পরিবেশদূষণ করেই চলেছে। পর্যটকদের অসচেতনতা ও দায়িত্ব জ্ঞানহীন আচরণের কারণে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে।পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে দ্বীপটি বাঁচানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রবাল, সামুদ্রিক শৈবাল, সামুদ্রিক কাছিম, লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুকসহ অনেক কিছুই বিলুপ্তির সম্মুখীন।

সেন্ট মার্টিনে প্রবাল উত্তোলন, কেনাবেচা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া এখানকার কাছিম ধরা, মারা, ডিম সংগ্রহ করা ও বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সামুদ্রিক কাছিম শীতকালে সেন্ট মার্টিন সৈকতে ডিম পাড়ে।

রাতে সৈকতে আলো না জ্বালাতে বলা হয়। এ ছাড়া হৈচৈ করতেও নিষেধ করা হয়।

আমরা সৈকতে হাঁটার সময়ও কোথাও খেয়াল না করেই হাঁটি। কিন্তু এভাবে হাঁটা মোটেও ঠিক নয়। কেননা কাঁকড়াদের বাসা থাকে। খেয়াল না করে হাঁটলে বাসা ভেঙে যেতে পারে। যেসব জিনিস পচে না সেসব জিনিস যেমন প্লাস্টিক, কাচ ফেলা ঠিক নয়।

সেন্ট মার্টিনে যেকোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে গড়ে উঠেছে নানা রকমের স্থাপনা। গড়ে উঠছে একের পর এক রিসোর্ট, হোটেল ও মোটেল। পর্য়টকদের চাপ বেশি থাকায় সুপেয় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এমনকি নলকূপ দিয়েও এখন আর সুপেয় পানি বেরোচ্ছে না। বেরোচ্ছে লবণাক্ত পানি। পর্যটকরা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিকের নানা বর্জ্য ফেলে রাখে।

এই দ্বীপকে টিকিয়ে রাখার জন্য ১৯৯৫ সালেই কিছু নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। সেটি ২০১০ সালে সংশোধনও করা হয়। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৈকতে, সমুদ্রে এবং নাফ নদে কোনো রকমের প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা যাবে না। এ ছাড়া মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সাইকেল, ভ্যানও চালানো নিষেধ করা হয়। দ্বীপের চারপাশে নৌভ্রমণ, জোয়ার-ভাটা এলাকায় পাথরের ওপর হাঁটা, ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা, রাতের বেলা আগুন জ্বালানো, আতশবাজি, ফানুস ওড়ানো, সামুদ্রিক ঘাস, কেয়াফল সংগ্রহ প্রভৃতি নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু এসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। দীর্ঘদিন ধরেই পরিবেশবাদীরা এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছেন যেন এখানে একেবারে বেশিসংখ্যক পর্যটক না প্রবেশ করে। যেসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা করা হয়েছে তা যেন ভেঙে ফেলা হয়। যেহেতু সেন্ট মার্টিনের দূষণ মারাত্মক পর্যায়ের আর পর্যটকদের চাপ অত্যধিক বেশি, তাই এখানে কিছু সময়ের জন্য পর্যটক আসা বন্ধ করা গেলে জীববৈচিত্র্য আরো নতুন করে জেগে উঠবে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, সেন্ট মার্টিন, কুয়াকাটা ও সুন্দরবনকে জরুরি ভিত্তিতে প্লাস্টিক বর্জ্য ও পলিথিনমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ একটি সেমিনারে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক সীমিত করার কথাও বলেছেন। সত্যিকার অর্থে এসব উদ্যোগ নেওয়া হলে পরিবেশবাদীদের দীর্ঘদিনের একটি চাওয়া পূরণ হবে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন হয়তো ফিরে পাবে তার আপন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

 

 লেখক: শিক্ষক ও গবেষক    

বনখেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র



বনখেকোদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে

  ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২০


বন এমন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ যেখানে প্রাকৃতিকভাবে গাছপালা পশুপাখি সবাই মিলে একসাথে থাকে। বনের আয়তন বিশাল হয়ে থাকে যেখানে নানা বৃক্ষরাজি, ছোটবড়ো ঝোপঝাড় থাকে। থাকে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গ। এখানকার ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্যর জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু, কোথাও শুকনা, কোথাও জলাশয়ে পূর্ণ থাকে। বন নানা রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই প্রাকৃতিক বনের ব্যবহার বহু আগে থেকেই রয়েছে।

বাংলাদেশে পাহাড়ি বন, ম্যানগ্রোভ বন, উপকূলীয় বন, শালবন, কৃত্রিম বন প্রভৃতি নানা রকম বন দেখা যায়। পাহাড়ি বন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলায় অবস্থিত। বৃহত্তর খুলনা জেলায় অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বন। বৃহত্তর পটুয়াখালী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ভোলা জেলায় উপকূলীয় বন অবস্থিত। এছাড়া বৃহত্তর  ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাংগাইল, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় শালবন রয়েছে। পাহাড়ি বনের পরিমাণ ১৩ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি। এসব বনে তেলশুর, চিকরাশি, বৈলাম, গামার, বাঁশ, শীল কড়ই প্রভৃতি গাছ জন্মে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে দেখা যায় বানর, শূকর, বন মুরগী, সাপ, শিয়াল, নেকড়ে, কাঠবিড়ালী প্রভৃতি। লতার মধ্যে রয়েছে কাঞ্চনলতা, আনিগোটা, কুমারিলতা, শতমূলী, গিলা প্রভৃতি। এছাড়া এখানে অনেক ছনই ঘাস পাওয়া যায়। শালবনটির একটি অংশ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে। এটি ৮০ কি.মি দীর্ঘ ও ৭-২০ কি.মি চওড়া। এটি মধুপুর গড় নামে পরিচিত। আরেকটি অংশ শেরপুর জেলায়। এই অংশটি ৬০ কি.মি দীর্ঘ ও ১.৫-১০ কি.মি চওড়া। এছাড়া শালবনের কিছু অংশ দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও নওগাঁ জেলায় অবস্থিত।

বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪.০৭ ভাগ ম্যানগ্রোভ বন। এসব বনের অধিকাংশ এলাকায় জোয়ার-ভাটা হয়। ফলে এ বনের গাছপালা বেশ লবণাক্ত সহনশীল হয়ে থাকে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, ধুন্দুল, কেওড়া, গোলপাতা এসব বনের প্রধান বৃক্ষ। এছাড়া এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী হলো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর ইত্যাদি। শালবনের প্রধান বৃক্ষই হলো শাল। এখানকার নব্বই ভাগ এলাকায় শাল গাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ একটি অংশ সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, রেল লাইনের দুধার, স্কুল-কলেজের আঙিনা প্রভৃতি জায়গায় এই বনায়ন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। এই সমস্ত সামাজিক বনের প্রধান বৃক্ষ হলো- ইউক্যালিপটাস, কড়ই, আকাশমনি, গোড়ানিম ইত্যাদি। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা যেমন খুলনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় উপকূলীয় বন অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৫২০০০০ হেক্টর। প্রধানত সুন্দরী, গেওয়া, গরান, ধুন্দুল, আমুর, ডাকুর প্রভৃতি পাওয়া যায়। এখানে ঝাউ, কেরু, পনিয়াল, কাঠবাদাম, পিপুল, নিশিন্দার দেখা মিলে।

বনের ওপর মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই নানাভাবে নির্ভরশীল। ঘর বানানো, জ্বালানি প্রভৃতি কাজে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই বন ব্যবহার করে আসছে। প্রায় ২০০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে দ্রাবিড় সভ্যতার বিকাশের সময় বন ব্যবহার সম্পর্কে জানা গেছে। সে সময় তারা গাছ কেটে ঘর বানাত। শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলত। বেদ, পুরাণ, রামায়ণ ও মহাভারতেও বন ও বনায়ন সম্পর্কে জানা যায়। এই সমস্ত গ্রন্থে শাল, বেল, কিংশুক প্রভৃতির কথা উল্লেখ আছে। সম্রাট অশোক সম্পর্কে জানা যায়- তিনি বন ও বন্যপ্রাণী ভালোবাসতেন ও সেসবের খুব যত্ন নিতেন এবং বন সংরক্ষণ করতেন। মোঘলদের আমলে বন সংরক্ষণের কথা তেমন পাওয়া না গেলেও তাদের বন ব্যবহার করার কথা জানা গেছে। তারা অবকাঠামোগত সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বনের গাছ ব্যবহার করত। পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যাপক মাত্রায় বন কেটে রেল লাইনসহ নানা কাজ শুরু করলেও ভারতবর্ষে প্রথম বন সংরক্ষণের কথা আসে লর্ড ডালহৌসির আমলে। পরবর্তীতে ১৮৬৪ সালের পহেলা নভেম্বর প্রথম ভারতে বন বিভাগ চালু হয়।

জাতিসংঘের মতে সারা বিশ্বে ১.৬ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে বনের ওপর নির্ভর রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ অবধি বিশ্বের ৮০ শতাংশ বন মানুষের কারণে ধ্বংস হয়েছে। এফএও-এর তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জ্বালানি কাঠের বার্ষিক অর্থমূল্য ৪ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। বনের ওপর মানুষ নানাভাবে নির্ভরশীল। বন অক্সিজেন তৈরি করে। আমাদের ঠাণ্ডা রাখে। কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণ করে। বাতাস পরিষ্কার ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। খাবারের জোগান দেয় ও কোটি কোটি মানুষকে চাকরি দেয়। বন বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। বাতাসকে নির্মল রাখে। পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি লোক বাস করে বনে। এদের মধ্যে ৬ কোটি লোকই আদিবাসী। এসব মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বনের ওপর নির্ভর করে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারের এক তথ্যমতে একটি গাছ বছরে ৮৫০ জন মানুষ বাঁচায় আর স্বাস্থ্য খরচ কমায় ৬৮০ কোটি ডলারের। পৃথিবীর এক কোটি মানুষ সরাসরি বনের ওপর নির্ভরশীল। বন আমাদের বিভিন্ন ধরনের ওষুধসহ মধু, মাশরুম, ফল, বাদাম ইত্যাদির জোগানদাতা। এছাড়া বনের গাছপালা শব্দ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, যা মারাত্মক শব্দদূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। বলা হয়ে থাকে বাড়ির চারপাশে গাছপালা থাকলে ৫ থেকে ১০ ডেসিবেল শব্দ কমিয়ে আনতে পারে।

জীবজগতের আশি শতাংশের বসবাস বনে। প্রায় ৬০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদের আবাসস্থল এই বন। এছাড়া উভচর প্রজাতির আশি শতাংশ, পাখি প্রজাতির ৭৫ শতাংশ এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী প্রজাতির ৬৮ শতাংশের বসবাস বনে। কিন্তু ধীরে ধীরে উজাড় হয়ে যাচ্ছে এসব বন। ডব্লইডব্লইএফের তথ্যমতে প্রতি বর্গ কিলোমিটার বন এক হাজার পর্যন্ত জীব প্রজাতি ধারণ করতে পারে। এফএও-এর মতে বিশ্বব্যাপী ২০০০-২০১৫ সাল নাগাদ প্রায় ১.৪ শতাংশ বন হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশে অধিকাংশ বন ধ্বংস হচ্ছে দখলের মাধ্যমে। বন বিভাগের তথ্যমতে সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বন মানুষের দখলে চলে গেছে। ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ২৫ হাজার একর বনভূমি দখল হয়েছে। এসব বন ধ্বংসের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এ ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর নেচার কনজারভেশনের ২০১৫ সালের প্রতিবেদন মতে বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ৩১টি। ১৬০০ প্রাণী প্রজাতির মধ্যে ৩৯০টি হুমকির মধ্যে রয়েছে। আর ৫০টির বেশি প্রজাতি ঝুঁকিতে রয়েছে। আইইউসিএনের ২০০০ সাল ও ২০১৫ সালের প্রতিবেদন তুলনা করলে দেখা যাবে এই বিলুপ্তির হার অত্যাধিক। ২০০০ সালে বিলুপ্ত প্রাণী প্রজাতির সংখ্যা ছিল ১৩টি। অর্থাৎ ১৫ বছরে ১৮টি প্রাণী প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে- যা ভয়াবহ বিলুপ্তির হারকে নির্দেশ করছে। বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- ডোরাকাটা হায়েনা, ধূসর নেকড়ে, নীল গাই, সুমাত্রা গণ্ডার, জাভা গণ্ডার, ভারতীয় গণ্ডার, শিঙা হরিণ, মন্থর ভালুক ইত্যাদি। আইইউসিএন-এর মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় আছে হাতি, ভোঁদড়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, কাঠবিড়ালি, কালো ভালুক প্রভৃতি।

সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বন উদ্ধারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৮৪ একর বেদখল হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর সংরক্ষিত বন। বনভূমি দখল করে আছে এমন ৮৮ হাজার ২১৫জন চিহ্নিত করা আছে। কিন্তু বনখেকো জানা থাকলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পত্রিকায় প্রকাশ অনেক ক্ষেত্রে মামলা করেই দায় সেরে ফেলা হচ্ছে। বনের জমি দখল করে এখানে শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে রিসোর্ট, বসতভিটাও বানানো হয়েছে। এমনকি বনের জমি দখল করে চাষাবাদও করা হচ্ছে। একটি তথ্যমতে এক লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বনভূমি দখল করে আছে।

চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বন বেশি হুমকির মুখে। ২৮টি জেলায় দখলকৃত বনভূমি রয়েছে। বনবিভাগের তথ্য মতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে কক্সবাজার। কক্সবাজার জেলায় দকলকৃত বনভূমির পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪৭১ একর। শেরপুরের বনের অবস্থাও খারাপ। এখানকার তিনটি উপজেলায় বনের জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে এটা ঠিক যে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বনের জমি কাদের দখলে রয়েছে তাদের একটি তালিকা করা গেছে। এই তালিকাটি প্রায় ৫ হাজার পৃষ্ঠার একটি নথি। সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সভায় বলা হয়েছে তালিকায় প্রভাবশালীদের নাম থাকায় বনের জমি উদ্ধার করা হচ্ছে না। এর আগে ২০১৯ সালেও অবৈধ দখলদারদের নাম সবার সামনে আনা হবে বললেও তা আর হয়নি। আমরা হতাশ হতে চাই না। আশা করি আমরা ধীরে ধীরে সমস্ত জমি উদ্ধার করতে পারব।

ইদানীং দেখা যাচ্ছে- বছরের জুন মাস থেকে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ধস শুধু কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতেই হচ্ছে নাÑ বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের যেকোনো পাহাড়-অঞ্চলেই এমন ধসের ঘটনাগুলো ঘটছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- সকল জায়গায় বর্তমানে একই ঘটনার কারণে পাহাড়ধসগুলো হচ্ছে। কারণগুলো আর কিছু নয়Ñ অবৈধ ও অপিরকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে থাকা বিপুল সংখ্যক গাছ নিধন করা। বৃক্ষ নিধনসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিপরীতে যেকোনো ক্ষতিকর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে যদি এখনই সচেতন ও সোচ্চার না হওয়া যায় তাহলে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে যে ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তা আরো বাড়বে ছাড়া কমবে না। তাই সংগত কারণেই আমাদের অনতিবিলম্বে বৃক্ষ বিধন বন্ধসহ পরিবেশ রক্ষায় মনোযোগী হতে হবে।

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র: কলাম লেখক, শিক্ষক ও গবেষক

পার্থেনিয়াম ক্ষতিকর গাছ

 


ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র শিক্ষক ও গবেষক

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্রপার্থেনিয়াম এক ধরনের আগাছা। এর উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট। এর আয়ুষ্কাল তিন থেকে চার মাস। এর পাতা চিকন। সবুজ রঙের। ফুল ছোট ছোট সাদা রঙের। এর অসংখ্য শাখা থাকে। ত্রিভুজের মতো ছড়ানো। এটি ১-১.৫ মিটার লম্বা হয়। গাছটি তিনবার ফুল ও বীজ দেয়। এই ফুল গোলাকার ও পিচ্ছিল। এটি অ্যাস্টারিসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একধরনের বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। দেখতে হাইব্রিড ধানগাছের মতো। এর পাতা গাজরের পাতার মতো। অঞ্চলভেদে এর বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন কংগ্রেস ঘাস, গাজর ঘাস, চেতক চাঁদনী প্রভৃতি। 

এটি মূলত উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে দেখা যায়। এটি এখন ২০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে এটি নাকফুল নামেও পরিচিত। এটি আলো ও তাপের প্রতি অসংবেদনশীল। তবে খরা সহনশীল। 

সীমান্তসংলগ্ন বাংলাদেশের ৩৫টি জেলায় এর বিস্তার ঘটেছে বলে সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় উঠে এসেছে। এটি বেগুন, টমেটো, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের পরাগায়ন কমিয়ে দেয়। ধান, ছোলা, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলের অঙ্কুরোদগমে ও বৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে। এটি খাদ্যনিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত সভায় জানানো হয়, মানুষ বা গবাদিপশু পার্থেনিয়াম দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর সংস্পর্শে চুলকানির সৃষ্টি হয়। ফলে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমাসহ নানা রোগ দেখা দেয়।

গবাদিপশুর শরীরে লাগলে ফুলে যায়। এর ফলে তীব্র জ্বর হয়। বদহজমসহ নানা রকমের রোগ হয়। গবাদিপশু এই গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর পর্যন্তও হতে পারে। মানুষের ত্বক লালচে হয় এবং ফুলে যায়। ত্বক ক্যানসারও হতে পারে। এর ফলে ঘন ঘন জ্বর, মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একটি তথ্যমতে, ভারতের পুনেতে পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মারা গেছে। 

আমের বাগান, আখ, কলা, হলুদখেতে এর আক্রমণ বেশি। করলা ও শিমখেতেও এদের আক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি ফসলের পরাগায়ন হ্রাস করে এরা। এটি ফলন কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া উদ্ভিদের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে বাধাগ্রস্ত করে।

এই গাছ থেকে চার ধরনের টক্সিন বের হয়। এগুলো হলো পারথেনিন, হিস্টামিন, হাইমেনিন ও অবরোসিন। এই টক্সিন নানা রকমের অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ডার্মাইটিস, ব্রঙ্কাইটিসের জন্য দায়ী। 

এই আগাছার প্রথম অস্তিত্ব দেখা যায় ২০০৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ অ্যাডকিনস যশোর অঞ্চলে প্রথম এটি দেখতে পান। একটি পার্থেনিয়াম থেকে ৬০ হাজার গাছ হয়। এ বীজ বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়—১০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। যশোর ও রাজশাহী এলাকায় এর উপস্থিতি বেশি। 

এটি ফসলের খেত বা রাস্তার দুই ধারে জন্মাতে পারে। এটি সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। এই গাছ মূলত এসেছে মেক্সিকো থেকে। এখন পুরো উপমহাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। 

এই আগাছাটিকে বিষাক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষিবিদদের মতে গাছটিকে এখন দেখলেই পুড়িয়ে ফেলা উচিত। এই ক্ষেত্রে এটি কাটতে গেলে শরীরে লেগে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এখান থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে। তাই কাটার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

হাতে গ্লাভস ও চোখে চশমা পরে নিতে হবে। মোটা কাপড়ের বা জিনসের প্যান্ট পরা থাকতে হবে। বুটজুতা পরতে হবে। এরপর গাছ কেটে গভীর গর্ত করে তা পুঁতে ফেলতে হবে। আগাছানাশক ব্যবহার করেও এটিকে মারা যায়। এ ক্ষেত্রে ডায়ইউরোন, টারবাসিল, ব্রোমাসিলজাতীয় আগাছানাশক ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি হেক্টরে ছিটিয়ে দিতে হবে। জৈবিকভাবেও এদের দমন করা যায়। পাতাখেকো পোকার মাধ্যমে এদের দমন করা সম্ভব। 

পার্থেনিয়াম গাছটিকে প্রথমে আমাদের চিনতে হবে। গাছ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং এর নিধনে কীভাবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি, তা পোস্টার, বিজ্ঞাপন ইত্যাদির মাধ্যমে জানাতে হবে।

লেখক: শিক্ষক ও গবেষক